সর্বনাশা মাদক তরুণ ও যুব সমাজের স্মৃতিশক্তি বিনষ্ঠ ও মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটায়; বাড়ছে ভয়াবহ অপরাধ

প্রকাশিত: ২:২৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৪, ২০২৫
CREATOR: gd-jpeg v1.0 (using IJG JPEG v62), quality = 82?

আওরঙ্গজেব কামালঃ

সর্বনাশা মাদক তরুণ ও যুব সমাজের স্মৃতিশক্তি বিনষ্ঠ ও মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটায়; বাড়ছে ভয়াবহ অপরাধ। মাদকের মরণ ছোবলে আক্রান্ত তরুণ ও যুব সমাজ আজ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে। সারা দেশে মাদক জন্ম দিচ্ছে একের পর এক ভয়াবহ অপরাধ। মাদকদ্রব্য গ্রহণ করলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে এবং দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীলতা সৃষ্টির পাশাপাশি দ্রব্যটি গ্রহণের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকে। মাদক একটা সর্বনাশা নেশা, সেটা শুধু তারাই অনুধাবন করতে পারেন, যাদের পরিবারের কোনো সদস্য মাদকাসক্ত। মাদকে আসক্ত সদস্য নিয়ে শুধু পরিবারের মধ্যে নয়, আত্মীয়স্বজনাও নানা কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। মনে রাখতে হবে, বর্তমানে মাদকের কারনে আমাদের যুব সমাজ অসংখ্য সংকট ও সমস্যায় জর্জরিত। বর্তমানে মাদকাসক্তদের শীর্ষে রয়েছে আমার তরুণ সমাজ। সর্বনাশা মাদকের মরণ ছোবলে আক্রান্ত তরুণ ও যুবসমাজ আজ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যে সকল সমস্যা বিদ্যমান তার একটি অন্যতম সমস্যা হচ্ছে মাদকের ভয়াল থাবা।

দিন দিন মাদকের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পর মাদকই সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। বর্তমানে দেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মাদকের কেনাবেচা হয় না। শহর থেকে শুরু করে গ্রামেও এটি সহজলভ্য। মাদক আমাদের জন্য হুমকি। এটা কারো একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। মাদক সেবন ও বিক্রি যারা করবে, তাদের ধরিয়ে দিতে সর্বস্তরের মানুষের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তরুণ সমাজ, দেশকে রক্ষা করতে হলে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। মাদকে আসক্ত করতে তরুণদের টার্গেট করা হয়। প্রথমে ছলেবলে, আলাপের ছলে বিনামূল্যে মাদক দেওয়া হয়। পরে তারা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। সব ধরনের রোগে তারা আক্রান্ত হয়। স্থায়ীভাবে যৌন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। মাদকের কারণে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে। দেশের তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে হলে মাদকের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণিপেশার মানুষের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পরিবারের মতো অনেক পরিবার মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আজ সর্বান্ত। মাদক নির্মূলে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনসহ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া এটি নির্মূল সম্ভব নয়।

জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল দেশেই নেশা ও নেশাজাত দ্রব্যের ব্যাপারে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের একই অভিমত যে,নাম যা-ই হোক নেশা ব্যবহারে মানুষের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটতে পারে এবং কঠিন রোগে এক সময় মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। একজন মাদক আশাক্ত ব্যাক্তি যে কোন অপরাধমুলক কর্মবান্ড ঘটাতে পারে। ফলে সমাজ,জাতি ও পরিবারের জন্য মাদক অভিশাপ হিসাবে দাঁড়িয়েছে। অনুসন্ধানে জানাযায়,বর্তমানে তরল মাদকদ্রব্যকে নানান আকর্ষণীয় নামে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। আবার ট্যাবলেট আকারের অনেক মাদক দ্রব্য এখন হাত বাড়ালে পাওয়া যায়। ফলে মাদকসেবী মাদক দ্রব্যতো ব্যবহার করে তরুণ ও যুব সমাজ ব্যাপকভাবে নানা বিধ অপরাধ মুলক কর্মকান্ড ও এমন কি আত্মঘাতী কাজে লিপ্ত হচ্ছে। ফলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ বিষয়ে বর্তমানে সব চাইতে উদ্বেগের কারণ হলো, দেশের অধিকাংশ শিা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও মাদকাসক্তি হয়ে পড়ছে। মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্টান থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ও উশ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীরা মাদক সেবন করছে। মাদকদ্রব্য মানবদেহের বিশেষ করে, স্মৃতিশক্তি বিনষ্ট করে, মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটায়।

আর এটা সেবন করে একজন মানুষ যে কোন ধরনের অপরাধ মুলক কর্মকান্ড ঘটাতে পারে। কুমিল্লার মুরাদনগরে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এমনি অসংখ্য ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। বর্তমানে দেশের মধ্যে ফেনসিডিল, হিরোইন, কোকেন, ক্রিস্টাল মেথ-আইস, সিডাকসিন, ইনোকট্রিন, মরফিন, টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনল, মেথাডন, বিয়ার, কেনা বিসরেসিন, এ্যাবসলিউট অ্যালকোহল, ভেষজ কেনাবিস, গাঁজা, দেশি-বিদেশি মদ প্রভৃতি ঘুণে পোকার মতো কুরে কুরে খাচ্ছে মানব অস্থিমজ্জাকে। এ ভয়ানক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারীদের অন্যতম রুট ও বাজারে পরিণত হয়েছে। আফ্রিকা, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, ভারত, মিয়ানমার, মালাবি থেকে শুরু করে ইউরোপ ও আমেরিকার মাদক ব্যবসায়ীদের নজর এখন বাংলাদেশের দিকে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বলছে, বাংলাদেশকে এখন হেরোইন ও কোকেনের ‘ভিআইপি রুট’ হিসেবে ব্যবহার করছে আন্তর্জাতিক চক্র। যদিও দেশে এই মাদকের চাহিদা তুলনামূলক কম, কিন্তু আন্তর্জাতিক পাচারের জন্য এটি নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

যে কারনে হাত বাড়ালে পাওয়া যাচ্ছে মাদক দ্রব্য। ফলে তরুন ও যুবসমান নিজেদের অজান্তেই বন্ধু বান্ধবের দ্বারা নেশার জগতে প্রবেশ করেছে। এছাড়া বর্তমানে বাজারে এনার্জি ড্রিংকস নামে চালু হয়েছে এক ধরনের মাদক দ্রব্য। আর এই সব এনার্জি ড্রিংকস খেয়ে নেশায় দেশের তরুণ সমাজ ক্রমেই বুঁদ হয়ে পড়ছে। কথিত এনার্জি ড্রিংকস নামের এসব পানিতে রয়েছে আফিম ও এলকোহলসহ নানান তিকর নেশাদ্রব্য। মাদকের বিষয়ে ইতোমধ্যেই অনেক অভিভাবক বিশেষ করে উচ্চ পরিবার ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকরা তরুণের এ অবস্থা দেখে নিজেদের সন্তানদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। পত্রিকার সূত্র মতে, দেশে প্রতি বছর ২৫ হাজার কোটি টাকার মাদক দ্রব্য বেচাকেনা করা করা হয়। পত্রিকা মারফতে জানা যায়, প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা শহরেই ইয়াবা বাবদ হাত বদল হয় ৭ কোটি টাকা। মাদক গ্রহনকারীর সংখ্যা কারো জানা নেই। তবে সরকার বলছে মাদকাসক্তদের সংখ্যা ৫০ লাখ। আর বেসরকারি হিসাব মতে, ৭০ লাখের ও বেশি। এদের অধিকাংশ তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতী।

মাদক গ্রহণকারী ৮০ ভাগের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। বিশ্বের নেশাগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম। ঢাকা শহরে শুধু ১০ লাখ মাদক সেবী রয়েছে। তার মানে ৬৮ হাজার গ্রামে গড়ে ১০৭ জন করে মাদকসেবী রয়েছে। যদিও বর্তমান সরকার জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে অভিযান চলমান রয়েছে। আসক্তির কবল থেকে যুবক-তরুণ সমাজকে রক্ষায় সমাজের সব পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।সচেতন মহল বলেন, পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জরুরিভিত্তিতে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। মাদক সিন্ডিকেট শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। তা না হলে সমাজে এই মাদকের ভয়াল থাবা থেকে কেউই নিরাপদ নয়। অতএব সরকারের উচিত, দেশ-জাতির ভবিষ্যত তরুণ সমাজকে সকল প্রকার নেশা ও নেশাজাত দ্রব্যেদি থেকে রায় দৃঢ় ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং এ পথের অসাধু ব্যবসায়ী ও তাদের সাথে জড়িত দলীয় ও প্রশাসনিক বিভাগের লোভী দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা।