নড়াইলে বিআরটিএ সেবা সহজ হলেও দালালদের মাধ্যমে কাজ করেন গ্রাহকেরা। দৈনিক লাল সবুজের দেশ দৈনিক লাল সবুজের দেশ প্রকাশিত: ১০:৪৭ অপরাহ্ণ, মে ৭, ২০২৫ আফজাল হোসেন নড়াইল থেকে, অনলাইন সেবার দুয়ার খুলেছে অনেক আগেই। তাই এখন আর নড়াইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অফিসে আগের মতো মানুষের গিজগিজ বা ভিড় নেই। কখনো দু–একজন সেবাগ্রহীতা আসছেন, কাজ সেরে চলে যাচ্ছেন। গত সোমবার সরেজমিনে নড়াইল বিআরটিএ অফিসে দেখা গেল এই দৃশ্য। নড়াইল বিআরটিএ কার্যালয়ের কর্মীদের ভাষ্য, প্রতিদিন গড়ে অর্ধশতাধিক সেবাগ্রহীতা আসেন ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা পরিবর্তন, নম্বর প্লেট আর ফিটনেস নবায়নের কাজে। একসময় একটি কাজ সারতে তিন-চারবার করে অফিসে ছুটতে হতো সেবাগ্রহীতাদের। এখন সেই অবস্থা নেই। কাজের বেশির ভাগটাই এখন অনলাইনে করতে হয়। তবে সময় বদলালেও বদলায়নি পুরোনো অভ্যাস। সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনলাইনে সেবা সহজ হলেও এখনো অনেক মানুষ দালালের দ্বারস্থ হচ্ছেন। গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের জন্য ভরসা করছেন শোরুম, আর ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য খোঁজ করছেন বাইরের দালাল। ভয় একটাই—যদি ভুল হয়, যদি ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়! এই আশঙ্কায় অতিরিক্ত টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করছেন না অনেকে। তাঁদের ভাষায়, ‘টাকা গেলে যাক, অন্তত ঝামেলা তো নেই।’ বিআরটিএ অফিসে মোটরসাইকেলের ডিজিটাল নম্বর প্লেট নিতে আসা নড়াইল সদর উপজেলার তপু চক্রবর্তী বলেন, ‘গাড়ি কেনার পর শোরুমের মাধ্যমে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করিয়েছি। আজ নম্বরপ্লেট নিতে এসেছি। ১০ বছরের রেজিস্ট্রেশনের জন্য ২৫ হাজার টাকা দিয়েছি।’ নির্ধারিত টাকার চেয়ে ৪ হাজার টাকা বেশি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তপু বলেন, ‘ওরা বলছে ওদের কাছে টাকা দিলে সহজে কাজ হয়ে যাবে। আমরা তেমন বুঝি না। ভোগান্তি হতে পারে সেটা ভেবে ওরা যা চাইছে, তাই দিয়ে দিছি।’লোহাগড়া উপজেলার কুমড়ি থেকে আসা তুষার ইমরান বলেন, নতুন গাড়ি কেনার পর শোরুমের মাধ্যমে দুই বছরের রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন ১৫ হাজার টাকা দিয়ে। তিনি জানেন না যে নিজে করলে কয় টাকা লাগত। গাড়ি কেনার সময় সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কথামতো শোরুমের মাধ্যমে করিয়েছেন। আর নিজে করলে হয়তো কম টাকা লাগত, কিন্তু সময় ব্যয় হতো। নিজে নিজে করলে তুষারের গাড়িটিতে দুই বছরের রেজিস্ট্রেশনে খরচ হওয়ার কথা ছিল ১১ হাজার ৭৬৪ টাকা।তাঁদের মতো একই অবস্থা সেবাগ্রহীতাদের অনেকের। ভোগান্তির ভয় আর সময় বাঁচাতে অধিকাংশ অতিরিক্ত টাকা দিয়ে শোরুম ও দালাল ধরে কাজ করেছেন। এ ব্যাপারে কথা হয় একটি শোরুমের এক কর্মীর সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মী বলেন, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে টুকটাক ২০০-৫০০ বেশি এবং যার থেকে যে রকম নিয়ে পারা যায়, তাঁরা নেন। কারণ, তাঁদের দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। তবে সেবাগ্রহীতারা যে শুধু যে দালাল-শোরুমের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা ব্যয়ে কাজ করছেন, এমনটি নয়। সচেতন কেউ কেউ নিজেই অনলাইনের সেবা গ্রহণ করেছেন। তাতে কোনো ভোগান্তিও পোহাতে হয়নি। মোহন খান নামের একজন বলেন, ‘আমি অনলাইনের মাধ্যমে গাড়ির ফিটনেস নবায়নের সব কাজ করেছি। ব্যাংকে নির্ধারিত ফি ছাড়া কোথাও কোনো টাকাপয়সা দিতে হয়নি। ’বিআরটিএ নড়াইল অফিসের সহকারী পরিচালক এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন বলেন, অনলাইনের কারণে সব সেবা এখন সহজ হয়েছে। বিআরটিএ অফিস এখন দালালশূন্য। ঘরে বসেই বিআরটিএর সব সেবা অনলাইনে একা একা নেওয়া সম্ভব। এতে কোনো ভোগান্তি নেই। তবে অনলাইনে যাঁরা আবেদন করতে পারেন না, তাঁরা বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে আবেদন করেন, ফলে দালালগুলো এখন কম্পিউটারের দোকানে ভিড় করছে ।শোরুমগুলোর ব্যাপারে ওয়াজেদ হোসেন বলেন, শোরুমগুলোর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে যেসব শোরুম গ্রাহকের সঙ্গে উল্টাপাল্টা করবে, টাকা বেশি নেবে, গ্রাহকের উচিত নয় সেখানে যাওয়া। সঠিকভাবে কাজ করার পথ খোলা আছে। এরপরও দালাল বা শোরুমে ধরে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কাজ করালে সেটা গ্রাহকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। SHARES প্রচ্ছদ বিষয়: