নওগাঁঃখোরশেদ আলম
নওগাঁতে সরিষা চাষে এ বছর নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৯ হাজার ১৬৫ মেট্রিক টন। মোট ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। এই সরিষার আনুমানিক বাজারমূল্য ৮৬৭ কোটি টাকা। উন্নত জাতের বীজ, আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃষি কর্মকর্তাদের সক্রিয় ভূমিকার কারণে এমন অভাবনীয় সাফল্য প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরিষার বিভিন্ন উন্নত জাত চাষের মাধ্যমে এ বছর কৃষকেরা ভালো ফলনের আশা করছেন। এর মধ্যে বারি সরিষা-৯, ১৪, ১৫, ১৭ এবং ১৮ ছাড়াও বিনা সরিষা-৪, ৯ এবং ১১ সহ অন্যান্য জাত চাষ হয়েছে।
নওগাঁর ১১টি উপজেলার মধ্যে ৯ টিতে সরিষা চাষের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। জেলা জুড়ে সরিষা চাষের এই অগ্রগতির পেছনে রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যকর ভূমিকা।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, “সরিষা চাষে আমরা চলতি মৌসুমে একটি রেকর্ড অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছি। সরিষার উন্নত জাতের বীজ ব্যবহারের পাশাপাশি কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সরাসরি কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছেন। জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে বীজ বপন, পরিচর্যা এবং সঠিক সময়ে ফসল সংগ্রহে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাদের এই পরামর্শের ফলে কৃষকেেরা রোগবালাই প্রতিরোধ, সেচ ব্যবস্থাপনা ও সার ব্যবহারে সচেতন হচ্ছেন। এ কারণেই এবার সরিষা চাষে ভালো ফলনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “সরিষা তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আমরা আশা করছি, নওগাঁ জেলার সরিষার উৎপাদন দেশের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখবে। এছাড়া সরিষা চাষে কৃষকদের মুনাফা নিশ্চিত করতে আমরা বাজার ব্যবস্থাপনাতেও নজর রাখছি।”
সরিষা থেকে উৎপাদিত তেল স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাজারে অর্থনৈতিক গতিশীলতা আনবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উন্নত জাতের সরিষা ব্যবহার ও আধুনিক প্রযুক্তির কারণে এই অঞ্চলের কৃষকরা প্রতিবারের চেয়ে বেশি উৎপাদনের লক্ষ্যে এগোচ্ছে।
সরিষা চাষে সরকারের সহায়তা, যেমন উন্নত বীজ সরবরাহ ও চাষের আধুনিক পদ্ধতি বাস্তবায়ন, নওগাঁ জেলাকে দেশের অন্যতম প্রধান সরিষা উৎপাদনকারী অঞ্চলে পরিণত করেছে। এর সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করছেন।
উন্নত প্রযুক্তি, সঠিক বীজ এবং কৃষি কর্মকর্তাদের হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি ভৌজ্য তৈল আমদানিতে দেশের বড় ধরনের একটা অর্থ অপচয় করতে হয়। আগামী দিনে এমন ভাবে নওগাঁর মত সারা দেশে সরিষার চাষ বৃদ্ধি পেলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সাস্রয় হবে এবং মানুষ ভেজাল মুক্ত ভৌজ্য তৈল হাতের নাগালের মধ্যে পাবে।